দৈনিক করতোয়া : আওয়ামী লীগ মতাদর্শের নিজ পরিবারকে দেশের স্বার্থে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির পতাকাতলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) দৈনিক করতোয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে নিজের পরিবারের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ সময় ছাত্রদল সভাপতি সমসাময়িক রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন।

রোববার (১৭ এপ্রিল) ছাত্রদলের ৫ সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী মতাদর্শের পারিবারিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ নিজেকে প্রস্তুত করেছেন তিল তিল করে। কলেজে পড়া অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কোনো বাধা এ পথ রুদ্ধ করতে পারেনি। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পুরোদমে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০১৯ সালে ছাত্রদলের সর্বশেষ কাউন্সিল ঘিরে আলোচনায় আসেন তিনি। সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছেন তিনি।

ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ক্যাম্পাসভিত্তিক ছাত্ররাজনীতিকে গতিশীল করা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে অগণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। এজন্য শুধু ছাত্রদল নয়, সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে চাই।

এই মুহূর্তে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বের মূল চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- আগামী তিন মাসের মধ্যে ছাত্রদলের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা, ঢাকা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি করে সংগঠনের সবাইকে একটা সাংগঠনিক পরিচয় দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, সাংগঠনিক এ কাজ করতে গিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে। কিন্তু একজনকে গ্রেফতার করা হলে অন্যজন প্রস্তুত আছে। সাংগঠনিক কমিটি গঠনের যে প্রক্রিয়া চলমান আছে, সেখান থেকে পিছু হটবে না তারা।

ছাত্রদলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড প্রসঙ্গে সংগঠনের নতুন সভাপতি শ্রাবণ বলেন, ২০১৯ সালে ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতৃত্ব দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ওই কমিটিতে আমরা একসঙ্গে দুই বছর সাত মাস কাজ করেছি। ছাত্রদলের তৃণমূল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কমিটি পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অনেক জায়গায় থানা ও ইউনিয়ন কমিটি শেষ হয়েছে। সাংগঠনিক জেলাগুলোর ২০-২৫ শতাংশ কাজ বাকি আছে, তাও শেষ হয়ে যাবে।

আওয়ামী পরিবারের সদস্য হয়ে ভিন্ন আদর্শের ছাত্রদলের রাজনীতিতে আকৃষ্ট হওয়া প্রসঙ্গে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, কলেজজীবনে ছাত্র রাজনীতির যে সংস্কৃতি চলমান ছিল তাতে ছাত্রদলের রাজনীতিতেই বেশি আকৃষ্ট হই। কারণ এই সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকেই অত্যন্ত মেধাবী, স্মার্ট ও রুচিশীল হিসেবে মনে হয়েছে। সেখান থেকেই ছাত্রদলকে বুকে লালন করতে থাকি। আর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হই।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতি করার কারণে বিগত ১০ বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন শ্রাবণ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত ১০ বছর আমার পরিবার থেকে আমি বিচ্ছিন্ন। আমার পরিবার ভিন্ন মতাদর্শের (আওয়ামী লীগ) রাজনীতিতে বিশ্বাস করে বলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সাথে আমার আদর্শিক দূরত্ব থাকবে। আমার পরিবার হয়তো মনে করেছে- ভিন্ন রাজনীতির কারণে আমার সাথে তারা যোগাযোগ রাখলে তাদের রাজনীতিতে ক্ষতি হতে পারে, তাই তারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এটা শুধু আমার পরিবার নয়, এটা পুরো দেশের চিত্র। এখন ভিন্ন মতের রাজনীতির কারণে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত দেশকে বিভক্ত করা হয়েছে। ঘরে ঘরে কোন্দল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার পরিবার যেহেতু আওয়ামী লীগ করে- তাই তাদের চরিত্রও আওয়ামী লীগের বাইরে কিছু হবে না। তারা আমাকে অস্বীকার করবে এটাই স্বাভাবিক। বাবা-মার সাথে আমি থাকতে পারি না, তবে আদর্শিক কারণে আমি গর্বিত। সংগঠনের কারণে আমাকে আমার পরিবার বিসর্জন দিতে হয়েছে। দল আমার সে আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করেছে। এখানে আমার আদর্শিক জয় হয়েছে।

ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার পর বিষয়টি পরিবারকে অবহিত করেছেন কিনা জানতে চাইলে শ্রাবণ বলেন, বিষয়টি আমি আমার মাকে টেলিফোনে জানিয়েছি। তার মাধ্যমে দেশের স্বার্থে আমি আমার পরিবারকে আমার আদর্শের রাজনীতিতে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। তাদেরকে জাতীয়তাবাদী দলের পতাকা তলে আসার জন্য বলেছি। একইসঙ্গে দেশের আওয়ামী লীগ পরিবারের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও আমার একই আহ্বান থাকবে- দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে থাকুন, দেশ গঠনে কাজ করুন।